মোস্তফা কামাল :
সততা, নিষ্ঠা ও সুনামের সাথে ১ বছর ২ মাস ঢাকার অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে কিশোরগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল আদালতে বদলী হলেন বিচারাঙ্গনের প্রিয়মুখ মোঃ জসিম উদ্দিন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের গত ৪ঠা জানুয়ারি ১১/১(২২) বিচার-৩/১টি-৩/১০১৬ নং স্বারক মূলে তাকে ঢাকার অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পদ হতে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদে বদলী করা হয়েছে। জনস্বার্থে করা বদলীর এই প্রজ্ঞাপনে আগামী ১৮ ই জানুয়ারি বর্তমান পদের দায়িত্বভার হস্তান্তর করে অবিলম্বে বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ঢাকার সি.এম.এম কোর্টে তাঁর কর্মকাল নাতিদীর্ঘ হলেও বিচারপ্রার্থী মানুষকে মানসম্মত ও দ্রুত সেবা দানের ক্ষেত্রে তিনি অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। ১৪ মাসে তিনি বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর মামলাসহ ৭০০ শ’টির বেশি মামলা নিস্পত্তি করেছেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার গোবিন্দারখীল গ্রামের এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৃত আব্দুল হক ও মাতার নাম মৃত হাজেরা খাতুন। শৈশব থেকে মেধাবী হিসেবে পরিচিত মোঃ জসিম উদ্দিন কৃতিত্বের সাথে মফস্বলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন চট্টগ্রাম হাজী মোহাম্মদ মহসীন কলেজে। সেখান থেকে আইন পেশার স্বপ্ন বুকে নিয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২০০৪ সালে আইন বিভাগে স্নাতক এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে এ্যাডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে প্রায় ৩ বছর কর্পোরেট প্রাকটিশনার হিসেবে আইন পেশায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের প্রথম ব্যাচে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৮ সালের ২২ শে মে লক্ষ্মীপুর জেলা জজ আদালতে ‘সহকারী জজ’ হিসেবে বিচারিক কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনি জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সহকারী পরিচালক, মুন্সীগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং সবশেষে ঢাকার অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সূচনালগ্ন থেকে তিনি দীর্ঘ ৫ বছর সরকারী আইন সহায়তা কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সরাসরি আইন সহায়তা কার্যক্রমের প্রচার ও প্রসারসহ এতদ্সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। সংস্থা কর্তৃক ২০১৩ ও ২০১৪ সালে প্রকাশিত “লিগ্যাল ইেড জার্নাল” এর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ২০১৩ সালে প্রকাশিত ‘জেলা লিগ্যাল এইড ম্যানুয়াল’ এবং ২০১৬ সালে প্রকাশিত “জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার: মিমাংসা বা মধ্যস্ততা সহায়িকা” গ্রন্থের লেখক তিনি। বিগত ২০১৬ সালের ৬ ই মার্চ, তাঁর রচিত “আইনগত সহায়তা ব্যবস্থা বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত” বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আনিসুল হক, এমপি। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত তাঁর এই বইটি আইন সহায়তা অঙ্গনে একটি মাইল ফলক। একই সাথে বইটি সারাদেশে সমাদৃত হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং সিদরাতুল মুনতাহা নামীয় এক কন্যা সন্তানের জনক। সততা, ন্যায় নিষ্ঠা ও বিচারিক উৎকর্ষতার কারণে আদালতের আইনজীবী, সহকার্মী ও বিচার প্রার্থীদের মধ্যে তিনি দীর্ঘদিন স্বরনীয় হয়ে থাকবেন। বর্তমান চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ হাফিজুর রহমানের তিনি ভূয়শী প্রসংশা করেণ। তার আমলে বিচার কার্য সাতছন্দভাবে পরিচালনা করেছেন বলে জানান। তিনি আরো জানান, বর্তমান সিএমএম আমাকে অত্যান্ত আপন করে আগলিয়ে রেখেছেন, তার কথা কোন দিন ভুলতে পারব না।