পদ্মা সেতুতে বন্ধ রয়েছে মোটরসাইকেল চলাচল। এছাড়া শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌরুটে চলছে না ফেরি। এমন পরিস্থিতিতে ট্রলারে পদ্মা নদী পারাপার হচ্ছেন মোটরসাইকেল চালকরা।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) দুপুরে মাঝিকান্দি ঘাট থেকে বেশ কয়েকটি ট্রলারকে নদী পাড়ি দিয়ে শিমুলিয়াঘাটে আসতে দেখা যায়। এসব ট্রলারে ১৫ থেকে ২০টি করে মোটরসাইকেল বহন করতে দেখা যায়। প্রতিটি মোটরসাইকেল পারাপারে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে দিতে হয়েছে চালকদের।
তবে ট্রলারে নদী পাড়ি দেওয়া বাইকাররা বলছেন, ফেরি বন্ধে উপায় না পেয়ে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এ পথ বেছে নিয়েছেন তারা। তাই তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে যত দ্রুত সম্ভব পদ্মা সেতুতে ফের মোটরসাইকেল চলাচলের দাবি জানিয়েছেন।
গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী মোটরসাইকেলচালক সায়মন বলেন, সেতু বন্ধ, ফেরিও বন্ধ তাহলে আমরা কীভাবে যাব? আমাদের তো যাওয়ার উপায় নেই। বাধ্য হয়ে ট্রলারে নদী পাড়ি দিলাম।
তিনি বলেন, সেতুতে ১০০ টাকা টোল, স্বপ্ন ছিল সেতু চালু হলে ঢাকা যাওয়ার খরচ ও ভোগান্তি কমে যাবে। এখন ট্রলারে ৫০০ টাকা লাগলো। খরচ আরও বেড়েছে, ভোগান্তির কথা আর নাই বা বলি।
বরিশাল থেকে ঢাকাগামী মো. সাজু বলেন, যারা ব্রিজে টিকটক করে, জোরে মোটরসাইকেল চালায়, বিশৃঙ্খলা করে, নাট খোলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। প্রয়োজনে ছবি তুললে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হোক। পদ্মা সেতুর জন্য সব সিদ্ধান্ত আমরা মানি। তবে কয়েকজনের জন্য সবার ভোগান্তি কেন হবে?
রিয়াদ হোসেন নামে আরেকজন বলেন, ঢাকার বাদামতলীতে একটা দোকানে কাজ করি। ছুটি নিয়ে বাসায় গিয়েছিলাম। দুপুর ১২টার মধ্যে দোকানে থাকার কথা ছিল। সকালবেলা প্রথমে জাজিরা টোল প্লাজায় যাই, সেখান থেকে আমাদের মাঝিকান্দি ফেরি ঘাটে যেতে বলা হয়। সেখানে এসে দেখি ফেরি চলে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে নদী পার হলাম। এখন দুপুর ২টা বাজে, বাকি পথ তো পড়েই আছে।
ইকবাল হোসেন বলেন, কিছু মানুষের জন্য সবাই ভুক্তভোগী কেন হবে? আমাদের দোষ কী, পদ্মা সেতু আমাদের গর্বের সেতু। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ- যারা প্রয়োজনের জন্য আসবে তাদের প্রয়োজন বিবেচনায় সেতু দিয়ে যেতে দেওয়া হোক। যাদের প্রয়োজন তাদের কি আটকে রাখা যাবে? তারা যেভাবেই হোক পদ্মা পাড়ি দেবেন।
এদিকে, যানচলাচলের তৃতীয়দিনে পদ্মা সেতুতে মঙ্গলবার চাপ অনেকাংশে কমে এসেছে। ফলে চলাচলরত সব ধরনের যানবাহনই স্বাচ্ছন্দ্যে নির্ধারিত টোল দিয়ে সেতু পার হতে পারছে। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পাঁচটি বুথে আদায় করা হচ্ছে টোল।
সেতু এলাকায় শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। মাওয়া প্রান্তে টোল প্লাজা অভিমুখে পদ্মা সেতু উত্তর থানার মোড় থেকে মোটরসাইকেল আরোহীদের সতর্ক করে বিকল্প পথ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অনেক মোটরসাইকেল এরপরও টোল প্লাজায় দফায় দফায় আসছে। সেতুতে ছবি তোলা, থামলে ও গাড়ি থেকে নামলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে টোলপ্লাজায় মাইকিং করাসহ টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। তবে জরুরি প্রয়োজনে সেতু পারাপার হতে আসা মোটরসাইকেল আরোহীরা জানিয়েছেন ভোগান্তির কথা। তারা দ্রুত এই ভোগান্তির অবসান চান।
সোমবার ভোর ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার। রোববার (২৬ জুন) রাতে এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ জারি করেছে সেতু বিভাগ। তথ্য অধিদপ্তরের এক তথ্য বিবরণীতে সেতু বিভাগের এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।