এফ এম সিফাত হাসান, শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুর জেলার কৃতি সন্তান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন । তাঁকে জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে ১১ জুন (মঙ্গলবার) ওই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। তিনি বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। ওয়াকার-উজ-জামান বর্তমানে লেফট্যানেন্ট জেনারেল হিসেবে চিফ অব জেনারেল স্টাফের (সিজিএস) দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণলায়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে আগামী ২৩ জুন ২০২৪ তারিখ অপরাহ্ন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহে প্রধানদের (নিয়োগ, বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা) আইন, ২০১৮ অনুসারে উক্ত তারিখ অপরাহ্ন থেকে ৩ (তিন) বছরের জন্য সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হলো।
জানা যায়, ওয়াকার-উজ-জামানের জন্ম ১৯৬৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। তার পৈতৃক নিবাস শেরপুর জেলার সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের ফটিয়ামারী এলাকায়। লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ১৯৮৫ সালের ২০ ডিসেম্বর ১৩তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। তিনি মিরপুর ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ এবং যুক্তরাজ্যের জয়েন্ট সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এছাড়াও তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘মাস্টার্স অব ডিফেন্স স্টাডিজ’ এবং যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে ‘মাস্টার্স অব আর্টস ইন ডিফেন্স স্টাডিজ’ ডিগ্রি অর্জন করেন।
তার সুদীর্ঘ ৩৯ বছরের বর্ণাঢ্য সামরিক জীবন কমান্ড, স্টাফ ও প্রশিক্ষকের অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। তিনি ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ৮ জুন পর্যন্ত ১৭ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এসময় তিনি তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহ দমনে নিষ্ঠা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে ভূয়সী প্রশংসা পান।
পরবর্তীকালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ২০১১ সালের ২৭ জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত দুই বছরেরও বেশি সময় ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জিওসি হিসেবে ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন বছর নবম পদাতিক ডিভিশন কমান্ড করেন।
এরিয়া কমান্ডার, সাভার এরিয়া ও জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) নবম পদাতিক ডিভিশন হিসেবে তিনি টানা তিন বছর অত্যন্ত সফলভাবে বিজয় দিবস প্যারেড ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ এর প্যারেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। এ বিরল কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘সেনাগৌরব পদক’ (এসজিপি) এ ভূষিত হন।
স্টাফ হিসেবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত একটি ব্রিগেড, স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকস (এসআইএন্ডটি) এবং সেনাসদরে বিভিন্ন পদবি ও নিয়োগে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি প্রশিক্ষক হিসেবে জেসিও এনসিও একাডেমি (জেএনএ), স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকস ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিপসট)-এ অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে সব পদবির দেশি-বিদেশি সেনাসদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।
সেনাসদর সামরিক সচিবের শাখায় তিনি সহকারী সামরিক সচিব, উপ-সামরিক সচিব এবং সামরিক সচিব (এমএস) হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদে দীর্ঘদিন কর্তব্যরত ছিলেন। সেনাসদর, জিএস শাখার চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও-এএফডি) হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতিসংঘের ব্যানারে মিলিটারি অবজার্ভার হিসেবে এংগোলাতে এবং সিনিয়র অপারেশন অফিসার হিসেবে লাইবেরিয়াতে দায়িত্ব পালন করেন। সেনাবাহিনীতে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি ‘অসামান্য সেবা পদক’ (ওএসপি)-এ ভূষিত হন। এছাড়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে দেশে ও বিদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। তিনি একজন সজ্জন, ক্রীড়ামোদি ও প্রাণবন্ত অফিসার হিসেবে সর্বমহলে সুপরিচিত।
ব্যক্তিগত জীবনে ওয়াকার-উজ-জামানের সহধর্মিণী সারাহনাজ কমলিকা জামান। এই দম্পতির ঘরে দুই কন্যা সন্তান (সামিহা রাইসা জামান এবং শাইরা ইবনাত জামান) রয়েছে। ওয়াকার-উজ-জামান প্রয়াত জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমানের জামাতা, যিনি ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯৭ থেকে ২৩ ডিসেম্বর ২০০০ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।