নিজস্ব প্রতিবেদক: পায়রা বন্দরকে চট্টগ্রামের বিকল্প হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার নানা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রথম টার্মিনালের জেটি ও ব্যাকআপ ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি পণ্য পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার জন্য বন্দরের সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হলেও বর্তমানে প্রকল্পটির অগ্রগতি মারাত্মকভাবে ধীর হয়ে পড়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) উদাসীনতা, প্রশাসনিক জটিলতা এবং বকেয়া বিল পরিশোধে বিলম্বের কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, পায়রা বন্দরের সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ এখন কার্যত স্থবির অবস্থায় রয়েছে। মাঠে স্কেবেটর, রোলা ও ঢালাই মেশিনসহ ভারী যন্ত্রপাতির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। প্রশাসনিক জটিলতা ও ভ্যারিয়েশন অর্ডার অনুমোদনে বিলম্বের কারণে প্রকল্পের কাজের গতি কমে গেছে। প্রায় ৬৮ কোটি টাকার বিল বকেয়া থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধীর গতিতে কাজ পরিচালনা করছে।এখন পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে পরিবর্তনের আদেশ অনুমোদন না হওয়ার কারণে অনেক সম্পন্ন কাজের বিল পায়নি ঠিকাদাররা। বন্দর সংশ্লিষ্টদের দাবি, আগামী বছর পায়রা বন্দরের প্রথম জেটি থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এর আগেই সংযোগ সড়কটি সম্পন্ন না হলে বন্দরের কার্যক্রম ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে।
তারা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের মূল দায়িত্বে রয়েছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে এটি একটি ডিপোজিট প্রকল্প হিসেবে সওজের বরিশাল জোনের মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বান ও চুক্তি সম্পন্ন করা হয়। পরে নকশা, এলাইনমেন্ট ও ডিজাইন পরিবর্তনের ফলে কিছু কাজের ধরণ ও পরিমাণে পরিবর্তন আসে। এ ছাড়া কিছু নন-টেন্ডার আইটেম (ড্রেনেজ লেয়ার, জিও-টেক্সটাইল ও উচ্চ মানের কংক্রিট) সংযোজন করা হয়।
যার জন্য পরিবর্তনের আদেশ অনুমোদন জরুরি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মামুন বলেন, ‘বড় অঙ্কের বিল না পাওয়ায় প্রকল্পে তীব্র অর্থ সংকট তৈরি হয়েছে। ডিপিপিতে মূল্য সমন্বয়ের বিধান থাকা সত্ত্বেও চুক্তির সময় তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে জ্বালানি তেল (৬৫ টাকা থেকে ১০৫ টাকা প্রতি লিটার) ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিকাদারি সংস্থা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি হয়ে পড়েছে।’
তিনি জানান, মূল্য সমন্বয় দ্রুত অনুমোদন এবং বকেয়া বিল তরান্বিত করা হলে প্রকল্পের কাজের গতি বাড়ানো সম্ভব হবে এবং নির্ধারিত সময়ে সড়কটি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা যাবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
২০২১ সালের ২৬ আগস্ট প্রায় ৬৫৫ কোটি টাকায় সওজ ও এসপেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের মধ্যে এ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পের আওতায় ৬.৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয় লেনের সড়ক, ৭টি পিসি/আরসিসি ব্রিজ, ৭টি কালভার্ট, টোল প্লাজা এবং বৈদ্যুতিক কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পরবর্তীতে নকশা ও এলাইনমেন্টে পরিবর্তন করা হলেও মূল্য সমন্বয় কার্যকর করা হয়নি, যার ফলে প্রকল্পটি এখন ধীরগতির জটিলতায় পড়েছে।
Leave a Reply