শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৬ অপরাহ্ন

এখনো নিখোঁজ মহিব, দেড় বছরের ছেলেকে নিয়ে দিশেহারা স্ত্রী

এখনো নিখোঁজ মহিব, দেড় বছরের ছেলেকে নিয়ে দিশেহারা স্ত্রী

মহিব ঢাকায় গ্যাসলাইন মেরামতের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ২৩ ডিসেম্বর ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি। লঞ্চে ওঠার পর মাকে কল দিয়ে মহিব বলেছিলেন, ‘আমি ভাত খেয়েছি। এখন ঘুমাব। সকালে বরগুনায় পৌঁছে ফোন দেব। তোমার জন্য অনেক কিছু কিনে নিয়ে আসছি।’

তহমিনা বলেন, সন্ধ্যা থেকেই তাঁর মনটা ভালো ছিল না। কেমন যেন অস্থির লাগছিল। ওই দিন মহিব লঞ্চে উঠে ইঞ্জিনকক্ষের পাশে একটি চাদর পেতে শুয়ে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কোনো কম্বল ছিল না। তাই ‘রাতে কষ্ট হবে’ বলে মায়ের কাছে দোয়াও চেয়েছিলেন তিনি। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ছেলেকে কল দিলে তাঁর নম্বর বন্ধ পান তিনি।

এরপর মহিবের বড় ভাইয়ের স্ত্রী বাড়িতে কল করে জানান, মহিব যে লঞ্চে ছিলেন, সেটাতেই আগুন লেগেছে। এরপর টানা কয়েক দিন ঝালকাঠি লঞ্চঘাট আর বরিশাল-বরগুনার হাসপাতালে ছোটাছুটি করেছেন পরিবারের লোকজন।

তহমিনা আরও বলেন, ‘পাঁচ থেকে সাতবার ঝালকাঠির বিভিন্ন নদীতে ট্রলার নিয়ে খোঁজাখুঁজির পরও কোনো সন্ধান মেলেনি মহিবের। ওর একটা ১৮ মাসের ছেলে আছে। আমি কী নিয়ে থাকব! কীভাবে আমার নাতিকে নিয়ে দিন কাটাব। সরকারিভাবে আমরা কোনো সহায়তা পাইনি। কেউ আমাদের খবর নেয় না। আমাদের অভাবের সংসারে উপার্জনক্ষম লোকটা এখন নিখোঁজ। টেনেটুনে আমাদের অভাবের সংসার চলছে। কিন্তু এভাবে কত দিন?।’

মহিবের ছেলের বয়স মাত্র ১৮ মাস। কোলের সন্তান নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিন পার করছেন মহিবের স্ত্রী লিপি বেগম। ছেলে আর পরিবার নিয়ে অজানা ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন লিপি। সরকারিভাবে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সাহায্য করা হলেও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার এখনো কোনো সহযোগিতা পাননি।

লিপি বলেন, ‘আমার ছেলেটা এখন ছোট। ছেলেটার লেখাপড়া, খাওয়াদাওয়া—সবকিছু নিয়ে এখন চিন্তা হচ্ছে। এ অভাবের সংসারে আমরা কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছি না। আমার স্বামীর ইচ্ছা ছিল, তাঁর ছেলেকে হাফেজি পড়াবে। তিনি এখন নাই। কিন্তু তাঁর ইচ্ছাপূরণের জন্য আমরা সবাই চেষ্টা করব।’

সময়ের ধারা সংবাদটি শেয়ার করুন এবং আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

© All rights reserved © somoyerdhara.com
Desing by Raytahost.com