সজল আহাম্মদ খান, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেক :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় এর অবস্থান। এখানে ৫০ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি এটি। সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি দেখতে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় থাকে। সমাধিস্থলের চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার উঁচু-নিচু টিলা নানা প্রজাতির বৃক্ষ সামাজিক বনায়ন আর সবুজের সমারোহ পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। সমতল ভূমি থেকে বেশ কয়েকটি সিঁড়ি মাড়িয়ে মূল বেদিতে পা রাখার পর হাতের বাঁয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সারিবদ্ধ কবর।
এখানে যারা ঘুমিয়ে আছেন সেই ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা হলেন সিপাহী দর্শন আলী, জাকির হোসেন, আব্দুল জব্বার, হাবিলদার তৈয়ব আলী, নায়েক আব্দুস সাত্তার, সিপাহী আব্বাস আলী, ফারুক আহম্মদ, ফখরুল আলম, মুজাহিদ নুরুমিয়া, নায়েক মোজাম্মেল হক, নায়েক সুবেদার আব্দুস ছালাম, নোয়াব আলী, সিপাহি মুসলেম মৃধা, প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম, আবদুল অদুদ, সিপাহী আজিম উদ্দিন, মতিউর রহমান, মোশারফ হোসেন, নায়েক সুবেদার মইনুল ইসলাম, সিপাহী নুরুল হক, আব্দুল কাইয়ুম, সিপাহী হুমায়ুন কবীর, ল্যান্স নায়েক আব্দুল খালেক, ল্যান্স নায়েক আজিজুর রহমান, কবির, ল্যান্স নায়েক আব্দুল খালেক, ল্যান্স নায়েক আজিজুর রহমান, তারু মিয়া, নায়েক সুবেদার বেলায়েত হোসেন, রফিকুল ইসলাম, মোরশেদ মিয়া, আশুতোষ রঞ্জন দে, তাজুল ইসলাম, শওকত, আব্দুস ছালাম, জাহাঙ্গীর, আমির হোসেন, পরেশ চন্দ্র মল্লিক, জামাল উদ্দিন, আব্দুল আওয়াল, আবেদ আহাম্মদ, সিরাজুল ইসলাম, ফরিদ মিয়া, মতিউর রহমান, শাকিল মিয়া, আব্দুর রশিদ, আনসার এলাহী বক্স, সিপাহী শহিদুল হক, সিপাহী আনোয়ার হোসেন, আব্দুল বারী এবং অজ্ঞাত তিনজন।
ওই সমাধিস্থলে রয়েছে নায়েক সুবেদার মইনুল ইসলামের কবর। তার নামেই ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় অতিপরিচিত মইনুল সড়ক নামকরণ করা হয়েছে। এ সমাধিতে ৫০ জনের নাম রয়েছে এর মধ্যে ৪৭ জনের পরিচয় মিলেছে। অন্য ৩ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর সদ্য প্রয়াত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফুল হাই সাচ্চুর নেতৃত্বে তৎকালীন জেলা প্রশাসক কোল্লাপাথর শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত কবর চিহ্নিত করে সংরক্ষন করার উদ্যোগ নেয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮০ সালে সেখানে একটি কাঠের তৈরি রেষ্টহাউজ হয়। গত এক দশকে সেখানে স্মৃতিসৌধ, মসজিদ, রেস্টহাউস, সীমানাপ্রাচীর ও পুকুরঘাট বানানো হয়। প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ ওই কাজ শেষ করে। কোল্লাপাথর শহীদ সমাধিস্থল কসবা উপজেলার দক্ষিনে ১০ কিলোমিটার দূরে ভারতীয় সীমান্তের সন্নিকটে বায়েক ইউনিয়নের কোল্লাপাথর গ্রামে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ সংগ্রহ করে স্থানীয় জনসাধারণের উদ্যোগে স্থানীয় অধিবাসী প্রয়াত আব্দুল করিম এর বাবা আবদুল মান্নান সাহেবের নিজস্ব মালিকানাধীন পাহাড়ের চূড়ায় ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা কে সমাহিত করা হয়। বর্তমানে এটি দেখাশোনা করছেন আব্দুল করিমের ছেলে মাহবুব করিম। সমাধিস্থল কে ঘিরে একটি পর্যটন স্পট গড়ে উঠেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ কর্তৃক সমাধিস্থল এর পাশে পর্যটকদের জন্য অত্যাধুনিক ডাকবাংলো ও মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে।